বৃষ্টির যত আমল
বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। বৃষ্টির মাধ্যমে তিনি উদ্ভিদ গজান। বৃষ্টি না হলে ফসল ফলানো সম্ভবপর হয় না। বৃষ্টির পানিতে সিঞ্চিত হয়ে যে তরু-লতা, গাছ-পালা, শস্য, ফলমূল জন্মে সেটাই মানুষ ও পশুপাখির জীবন ধারনের প্রধান উপকরণ। বৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরার বুক ময়লা আবর্জনা ধুয়ে মুছে, রোগ-জীবানু মুক্ত হয়ে মানুষের বসবাসের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে। পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বৃষ্টির বড় ভূমিকা রয়েছে। তাইতো বৃষ্টি পেয়ে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা মানুষের কর্তব্য এবং অনাবৃষ্টি দেখা দিলে তা থেকে মুক্তির জন্য বৃষ্টির নামায আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। মানব জীবনে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও বৃষ্টির এমন গুরুত্বের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বৃষ্টি সংক্রান্ত বেশ কিছু শিষ্টাচার শিখিয়েছেন যা আমরা তাঁর সুন্নাহ থেকে জানতে পারিঃ
বৃষ্টির
জন্য জুমার খোতবাতে দোয়া করা: আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে
এসেছে- একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম জুমার
খোতবা দেয়াকালে
একব্যক্তি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামের
নিকট বৃষ্টির
জন্য দোয়া
করার আবেদন
জানালেন।
তখন তিনি
হাত তুলে
দোয়া করলেন:
আল্লাহুম্মা আগিছনা,
আল্লাহুম্মা আগিছনা,
আল্লাহুম্মা আগিছনা
(হে আল্লাহ,
আমাদের বৃষ্টি
দিন, হে আল্লাহ আমাদের
বৃষ্টি দিন,
হে আল্লাহ,
আমাদের বৃষ্টি
দিন)
[সহিহ বুখারি, ১০১৪]
সে জন্য জুমার খোতবাতে
সকল মুসল্লিকে নিয়ে বৃষ্টির জন্য
দোয়া করা সুন্নত।
বৃষ্টির
প্রার্থনার নামায আদায় করা: অনাবৃষ্টি দেখা দিলে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি মুসলমানদেরকে নিয়ে
বৃষ্টি প্রার্থনার দুই রাকাত নামায
খোলা ময়দানে গিয়ে আদায়
করতেন। নামায
শেষে খোতবা দিতেন।
মুসলমানদেরকে নসীহত করতেন।
এরপর দোয়া করতেন, আল্লাহর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন
এবং বৃষ্টি চাইতেন।
এরপর তিনি তাঁর পরিধেয়
পোশাক (পাগড়ি বা জামা)
উল্টিয়ে পরতেন। সহিহ
বুখারিতে এসেছে- “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইসতিসকা (বৃষ্টি প্রার্থনা) এর
নামায আদায় করেছেন দুই
রাকাত, এরপর তিনি তাঁর
চাদর উল্টিয়ে পরেন।”
[সহিহ
বুখারি, ১০২৬]
বৃষ্টি
নামলে গায়ের কিছু অংশ অনাবৃত করা সুন্নত: যখন বৃষ্টি নামে
তখন গায়ের কিছু অংশের
পোশাক অনাবৃত করা সুন্নত। আনাস
(রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে
রয়েছে- একদা আমরা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
সাথে ছিলাম। সে
সময় আমাদেরকে বৃষ্টি পেয়েছে।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তাঁর গায়ের পোশাক
কিছুটা সরিয়ে নিলেন যাতে
তার গায়ে বৃষ্টি পড়ে। আমরা
জিজ্ঞেস করলাম: আপনি এমনটি
কেন করলেন? তিনি বললেন:
“যেহেতু বৃষ্টি তার রবের
নিকট হতে নবাগত।”
[সহিহ
মুসলিম, ৮৯৮]
বৃষ্টির
সময় পঠিতব্য দোয়া: আয়েশ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত হাদিসে এসেছে বৃষ্টি
দেখলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলতেন: আল্লাহুম্মা, সাইয়্যিবান
নাফিআ (হে আল্লাহ, এ
যেন হয় কল্যাণকর বৃষ্টি)।
[সহীহ
বুখারি, ১০৩২]
বৃষ্টির
সময় দোয়া কবুল হয়: সাহল বিন সাদ
(রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন
যে, দুই অবস্থার দোয়া
ফিরিয়ে দেয়া হয় না। আযানের
সময়ের দোয়া এবং জিহাদকালীন
দোয়া যখন একপক্ষ অপর
পক্ষের মুখোমুখি হয়। অপর
এক বর্ণনাতে আছে- বৃষ্টিকালীন দোয়া। [সুনানে
আবু দাউদ, আলবানী হাদিসটিকে
হাসান বলেছেন]
বৃষ্টির
পর যে দোয়া পড়তে হয়: যায়েদ বিন খালেদ
আলজুহানি (রাঃ) হতে বর্ণিত
হাদিসে এসেছে- “আর যে ব্যক্তি
বলবে: মুতিরনা বি ফাদলিল্লাহি ওয়া
রাহমাতিহি। সে ব্যক্তি আমার
প্রতি ঈমানদার এবং নক্ষত্রের (প্রভাবের)
প্রতি কাফের। [সহিহ বুখারি ও
সহিহ মুসলিম]
ব্যাপক বৃষ্টি ও ঢল নামার আশংকা হলে করণীয়: হাদিসে এসেছে- যদি
ব্যাপক বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ধন-সম্পদ নষ্ট
হওয়া, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া এবং
জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা
দেয় তখন নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:
হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি
দিন, আমাদের উপরে নয়। হে
আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং উদ্ভিদ
গজাবার স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।
বৃষ্টির
মৌসুমেও অনাবৃষ্টিতে আমরা যে কষ্ট
পাই এর থেকে নাজাত
পাওয়ার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর
দিকে ফিরে আসা উচিত। ইসতিগফার
করা উচিত। বৃষ্টির
নামায আদায় করা উচিত। জুমার
খোতবাতে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা
উচিত। বৃষ্টি
পেলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং
এ সংক্রান্ত সুন্নতগুলো পালন করার চেষ্টা
করা বাঞ্চনীয়। আল্লাহ
আমাদেরকে তাঁর আযাব ও
গজব থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
Please Share this article and earn reward from Allah.
আপনি কি লেখাটি পড়েছেন? তাহলে কুইযে অংশগ্রহণ করুনঃ
কুইযঃ
আপনি কি লেখাটি পড়েছেন? তাহলে কুইযে অংশগ্রহণ করুনঃ
কুইযঃ