যে যিকিরে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়
দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য আমাদের রাসুল (সাঃ) বহু যিকির আযকার আমাদের শিখিয়ে গেছেন। এই যিকির আযকার খুবই সহজ এবং দিনের যে কোন সময় যে কোন অবস্থাতেই পড়া যায়। দুশ্চিন্তা দূর করে এমন নির্ভরযোগ্য আটটি আযকার নিচে দেয়া হলঃ
সকল দুশ্চিন্তার সমধান করবে এই দুয়া:
“أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ”.
“আস্তাগফিরুল্লহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর দিকে অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসছি)”।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি বেশী বেশী ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তাঁর জন্য যে কোন পরিস্থিতিতেই উপায় বের করে দিবেন, তার সমস্ত সমস্যা দূর করে দিবেন, এবং এমন জায়গা থেকে রিযিক এর ব্যবস্থা করে দিবেন যা সে কখনও চিন্তাও করেনি।” (বুখারী, মুসলিম)
নেতিবাচক চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত রাখবে:
أعوذُ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ
আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনীর রযীম। (বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।)
কুরআনে মহান আল্লাহপাক বলেন, “যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (৪১ঃ৩৬)
এই বিষয়ে শাইখ ইয়াসির কাধির একটি সুন্দর লেকচার ইউটিউবে পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলের শেষে লিঙ্ক দেয়া আছে।
হাশরের দিনে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হবার জন্য যে দুয়া বা আযকার (তিনবার পড়তে হবে):
“رَضِيتُ باللهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلَامِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَى اللهُ عَلِيهِ وَسَلَّمَ نَبِيَّاً”.
“রদ্বিতুবিল্লাহি রব্বা, ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনা, ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা নাবিয়া ওয়া রাসুলাহ। (আমি আল্লাহকে রব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট)”
“মহান আল্লাহপাক ওয়াদা করেছেন যে, যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যায় তিনবার এই দুয়া পড়বে, হাশরের ময়দানে আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।” (আহমদ, আন নাসাই, আত তিরমিযি)
সকল দুশ্চিন্তা দূর করতে। এবং আল্লাহর রহমত লাভ করতে এই দুরুদঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى مُحَمَّد
আল্লহুম্মা স্বল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
উবাঈ ইবনে ক্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত,
“আমি রাসুল (সাঃ) কে আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার উপর অনেক বেশী করে দুরুদ পড়ে থাকি। আমি আমার ইবাদতের কতটুকু অংশ আপনার উপর দুরুদ পড়ার পেছনে ব্যয় করব? রাসুল উত্তর দিলেন, যত বেশী তোমার মন চায়।” আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তখন তিনি উত্তরে বললেন, যত বেশি তোমার ইচ্ছা হয়। তবে যতই বাড়াবে, ততোই তোমার জন্য ভালো। তখন আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি উত্তরে বললেন, যত বেশি তোমার ইচ্ছা হয়। আর যত বেশি তুমি বাড়াবে ততোই তোমার জন্য কল্যাণকর। তখন আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি উত্তরে বললেন, যত বেশি তোমার ইচ্ছা হয়। তবে তুমি যদি বাড়াও, তাহলে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, হে রাসুল (সঃ), তাহলে আমার দুয়াই হবে শুধু আপনার প্রতি দরুদ। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেক্ষেত্রে তোমার সমস্ত দুশ্চিন্তা এবং গুনাহ মিটানোর জন্য এটাই যথেষ্ট হবে। তিরমিজি হতে সহীহ সনদে বর্ণিত।
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ
যে ব্যাক্তি একবার আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তায়ালা তাকে দশগুণ রহমত দান করবেন মুসলিম আবু দাঊদ এবং তিরমিযী।
سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ (সুবহানাল্লহি ওয়ানিহামদিহি) এই দুয়াটি দিনে ১০০ বার পড়াঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে এক হাজার বার সুবহানাল্লহি ওয়ানিহামদিহি পড়বে, তাহলে আল্লাহপাক তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (বুখারী)
মনের আশা সহজেই পূরণ হবে(এই দুয়াটি ৭ বার পড়লে):
“حَسْبِيَ اللهُ لَآ إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ”.
হাস্বিয়াল্লহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া রব্বুল আরশিল আযীম।
(আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট . আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরেই ভরসা করলাম, তিনিই মহান আরশের অধিপতি।)
আবু দাউদ এবং ইবনে আস-সুন্নী হতে বর্ণনায় এসেছে, " যে ব্যক্তি সকালে এবং সন্ধ্যায় সাত বার এই দুয়া পড়বে, আল্লাহপাক তার দুনিয়া এবং আখিরাতের সমস্ত আকাঙ্কখা পূরন করবেন।"
বিপদ আপদ হতে সুরক্ষা পেতে দুয়া:
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ”.
বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মাআস্মিহি শ্বাইয়ুন ফ্বিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামায়ী ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম। ( মহান আল্লাহপাকের নামে, যার নামের আশ্রয়ে, পৃথিবী এবং আসমানের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারেনা। তিনি সব কিছু শুনেন এবং জানেন।).
" যে ব্যক্তি সকালে এই দুয়া তিনবার পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ তাঁর কোন ক্ষতি বা বিপদ ঘটাতে পারবেনা; এবং যে সন্ধ্যায় এটি তিনবার পড়বে, সকাল পর্যন্ত কেউ তাঁর ক্ষতি বা বিপদ ঘটাতে পারবেনা।" ( আবু দাউদ, আত-তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমদ)
উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং দুঃখ দূর করার দুয়াঃ
" আল্লহুম্মা ইন্নি আবদুকা, ইবনু আবদিকা, ইবনু আমাতিকা, না সিয়াতি বিইয়াদিকা, মা দ্বিন ফিয়া হুকমুকা, আদলুন ফিয়া ক্বদাউকা, আস আলুকা বি কুল্লিসমিন হুয়া লাকা, সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতাবিকা, আও আল্লামতাহু আহাদান মিন খলকিকা, আয়িসতা'সারতা বিহি ফী ইলমিল গ্বইবি ইনদাকা, আন তায আলাল কুরআনা রবিয়া ক্বলবি, ওয়া নুরা স্বদরি, ওয়া জালা আ হুঝনি, ওয়া যাহাবা হাম্মী"
" হে আল্লাহ্! আমি আপনার বান্দা, আপনার এক বান্দার সন্তান, আপনার এক বান্দির সন্তান, আমার মাথার সম্মুখ ভাগ (কপাল) আপনার হাতে, আমার উপর আপনার ফায়সালা সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠ, আমি আপনার কাছি চাই, সেসব নামের উসিলায়, যেসব নামে আপনি নিজেকে ভুষিত করেছেন, কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আপনার কোন মাখলুককে শিখিয়েছেন, অথবা শুধুমাত্র আপনার নিকট রেখেছেন; আমি চাই যে আপনি কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্ত, আমার বক্ষের নুর, আমার সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, চিন্তা দুরকারী এবং বিপদ থেকে উদ্ধারের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করে দিন। "
No comments: