মানব জীবনে বিপর্যয়- ইসলামের ২৫ টি অমীয় বাণী
মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে
পৃথিবীতে পাঠীয়েছেনই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। পরীক্ষার মাধ্যমেই আল্লাহ প্রকাশ করেন কে
তাঁর অনুগত বান্দা, আর কে তাঁর অবাধ্য বান্দা। এর মাপকাঠিতেই নির্ধারণ হয় জান্নাত
ও জাহান্নামের অধিবাসীদের।
কোরআন হতে ১০ টি বাণী
১। নিশ্চয় কষ্টের
সাথে স্বস্তি রয়েছে।নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (৯৪:৫-৬)
২। এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে
পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়,
ক্ষুধা, মাল ও
জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ
দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই
সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে
সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর
অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। (২:১৫৫-১৫৭)
৩। আমি মানুষকে
সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও
দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে
পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।(৭৬:২-৩)
৪। যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে
দেখল, তখন
বলল, আল্লাহ
ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন। এতে
তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই
বৃদ্ধি পেল। (৩৩:২২)
৫। আমি পৃথিবীস্থ
সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে
ভাল কাজ করে। (১৮:৭)
৬। আল্লাহ কাউকে
তার সাধ্যাতীত
কোন কাজের ভার দেন না,
সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের
পালনকর্তা, যদি
আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের
উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের
প্রভূ!
এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর।
আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর। (২:২৮৬)
৭। ... আর যে
আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ
তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে
রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ
তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে
রেখেছেন। (৬৫:২-৩)
৮। আপনার
পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেনি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। আপনার জন্যে পরকাল
ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়। আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান
করবেন, অতঃপর
আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (৯৩:৩-৫)
৯। হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও
সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার
বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (৮৯:২৭-৩০)
১০। যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয়
করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত
দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি
সালাম, তোমরা
সুখে থাক, অতঃপর
সদাসর্বদা বসবাসের
জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। (৩৯:৭৩)
হাদীস হতে ১০ টি বাণী
১। মুমিনের ব্যাপার আসলেই বিস্ময়কর। তাঁর জীবনের সব কিছুতেই শুধুই কল্যাণ
এবং এমনটা শুধু মুমিনেরই হয়ে থাকে। যদি তাঁর ভাল কিছু হয়, তাহলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং এটা
তাঁর জন্য কল্যাণকর। আর যদি তাঁর জীবনে কোন বিপদ আপতিত হয়, তাহলে সে সবর করে
এবং এটাও তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়। (সহীহ মুসলিম)
২। বান্দা আমার
সমবন্ধে যে
রকম ধারণা
করে, আমি তাঁর সাথে
সে রকম
আচরণ করি। আমি তাঁর
সাথে থাকি
যখন সে
আমাকে স্মরণ
করে। সে যদি একাকী
আমাকে স্মরণ
করে, আমিও তাকে একাকী
স্মরণ করি। সে যদি আমাকে কোন
মজলিসে স্মরণ
করে, আমিও তাকে তাঁর
চেয়ে উত্তম
মজলিসে স্মরণ
করি। সে যদি আমার
দিকে এক
বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তাঁর দিকে এক হাত অগ্রসর হই। সে যদি আমার দিকে এক হাত
অগ্রসর হয়, আমি তাঁর দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। সে যদি আমার দিকে হেটে আসে, আমি তাঁর
দিকে দৌড়ে যাই। (সহীহ বুঝারী, সহীহ মুসলিম)
৩। দুনিয়াতে মুসাফিরের ন্যায় বসবাস
কর (সহীহ বুখারী)
৪। হে যুবক, আমি তোমাদের কিছু কথা
শিক্ষা দিতে
চাই। আল্লাহর প্রতি নিজেকে রুজূ কর, তিনি তোমাদের প্রতি খেয়াল
রাখবেন। আল্লাহর প্রতি মনযোগী হও, তাহলে তাঁকে তোমাদের পাশেই দেখতে পাবে। যদি কিছু
চাইতে হয়, রব্বের কাছে চাও। যদি সাহায্য দরকার হয়, আল্লাহর কাছে চাও। মনে রেখ,
সমগ্র পৃথিবীর মানুষ যদি তোমার কোন সাহায্য করার জন্য একত্রিত হয়, তাঁরা তাতে
সক্ষম হবেনা যতক্ষণ আল্লাহ না চান। এবং সমগ্র পৃথিবীর মানুষ যদি তোমার কোন ক্ষতি
করার জন্য একত্রিত হয়, তাঁরা তাতে সক্ষম হবেনা যতক্ষণ আল্লাহ না চান এবং যদি না
তোমার তক্বদিরে তা লেখা থাকে। ক্বলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, এবং কালি শুকিয়ে গেছে।
(সুনান আত-তিরমিযী)
৫। মহান আল্লাহপাক বলেন, “হে আদম সন্তান, যতক্ষণ তুমি
আমার কাছে
ক্ষমা চাইবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে
দিব, এবং এজন্য আমি
কোন কিছুরই পরোয়া করবো
না। হে আদম সন্তান, তোমার গুনাহ
যদি আসমান
সমান ও হয়, এবং তুমি আমার
কাছে ক্ষমা
চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা
করে দিব। হে আদম সন্তান, তুমি যদি
পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে
আমার কাছে
এমন অবস্থায় আসো যে আমার সাথে কোন
শরীক করনি, আমি তাঁর
চেয়েও বেশী
ক্ষমা নিয়ে
তোমার কাছে
আসবো”। (সুনা আত-তিরমিযী)
৬। “নিশ্চয় আল্লাহতাআলা আমার
উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ভুল, অথবা ভুলে যাওয়া এবং জোর জবরদস্তিতে যে সমস্ত গুনাহ করা
হয়, তা মাফ করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাযাহ)
৭। “নিশ্চয়ই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা নেয়া হয়
নবীদের, এরপর যারা নেককাজে তাঁদের নিকটতর তাঁদের, এরপর যারা নেককাজে তাঁদের নিকটতর তাঁদের। একজন মুসলিমকে তাঁর
ঈমানের মাত্রা অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। সে যদি ঈমানে দৃঢ়তর
হয়, তাহলে তাঁর পরীক্ষাও কঠিনতর হয়। সে যদি ঈমানে দুর্বল হয়, তাঁর পরীক্ষাও সে
অনুযায়ী হয়। এভাবে বান্দাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পরীক্ষায় ফেলা
হয় যতক্ষণ না সে
পুরোপুরী গুনাহমুক্ত হয়ে দুনিয়াতে বিচরণ করে। ”
৮। নিশ্চয় মহান
আল্লাহতাআলার কাছে
১০০ টি
রহমত রয়েছে, যার মধ্য
থেকে ১টি
অংশ সমগ্র
সৃষ্টির মাঝে
দেয়া হয়েছে। আর বাকি ৯৯ অংশ আল্লাহপাক বিচারের দিবসের জন্য
রেখে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম)
৯। যখন আল্লাহতাআলা সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলেন, তিনি তাঁর আরশের উপর এক কিতাবে লিখেছেন, ‘আমার দয়া আমার ক্রোধের উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে।’ (সহীহ বুখারী)
১০। আমাদের রব প্রতিদিন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে প্রথম আসমানে আসেন, এবং বলতে থাকেন, ‘কে আমায় ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাঁকে ক্ষমা করব?’ (সহীহ বুখারী)
পূর্ববর্তী নেককারদের ৫টি উক্তি:
১। যার জন্য মহান
আল্লাহতাআলা জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন, সে যে কারণে বা আমলের জন্য জান্নাতে
যাবে, সেটি তার জীবনের চরম দুর্দশা থেকেই সহসা উদ্ভুত হবে। অপরদিকে, যার জন্য মহান
আল্লাহতাআলা জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছেন, সে যে কারণে জাহান্নামে যাবে, সেটি
তার জীবনের কামনা প্রসূত বিষয় থেকেই সহসা উদ্ভুত হবে। (ইবনে ক্বাইয়িম)
২। “মানুষের জীবনের যে কোন
দুঃখ দুর্দশা য তার রব্বের দিকে ফিরিয়ে আনে তা তার রব্বের সেই সব নিয়ামত হতে উত্তম
যা তাঁকে রব্ব থেকে দূরে নিয়ে যায়।” (ইবনে তাইমীয়া)
৩। “জ্ঞানী ব্যক্তিদের কখনই তাঁদের জীবনে আপতিত
বিপর্যয়কে বিফলে
যেতে দেয়
উচিৎ না। কারণ, বিপদ আপদ মানুষের গুনাহকে মিটিয়ে দেয়, সবরের মাধ্যমে নেকী
লাভের সুযোগ
করে দেয়, নেক কাজে
অলসতা এবং
অবহেলা দূর করে, মহান আল্লাহর অশেষ নিয়ামতের মর্যাদা শেখায়, তওবা নসীব হয় এবং
সদাকার মানসিকতা তৈরী করে দেয়।” (আল ফযল ইবনে সালেহ্)
৪। ইমাম শাফেয়ীকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ ‘একজন মুমিনের জন্য কোনটা
ভাল? বিপদের মাধ্যমে পরীক্ষায় আপতিত হওয়া, নাকি ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ভাল কাজ
করার সুযোগ পাওয়া?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘পরীক্ষা ছাড়া
একজন মুমিন
কিভাবে ভাল
কাজের সামর্থ্য লাভ করতে
পারে? আল্লাহ ইউসুফ (আঃ) কে প্রথমে পরীক্ষা করেছেন, এরপর তাঁকে
ক্ষমতা দিয়েছেন।’ (ইমাম শাফেয়ী)
৫। “রুহ বা
আত্না কখনই
পরিশুদ্ধ এবং
তাকওয়া লাভ
করতে পারেনা যতক্ষণ না
দুঃখ কষ্টের মাঝে পতিত
না হয়। ঠিক যেমন
না পোড়ালে সোনা খাঁটি
হতে পারেনা।” (ইবনে ক্বাইয়িম)
মহান আল্লাহ আমাদেরকে বিপদে
ধৈর্য ধরার
এবং নেকী
হাসিল করার
তৌফিক দান
করুন। আমিন।
(শাইখ ইসমাইল
কামাদারের এর লেখা অবলম্বনে)
No comments: