সেই মেষপালকের গল্প
অনেক দিন আগের কথা। ইরাকের বসরায় এক বৃদ্ধ ব্যক্তি বাস করত। তার এক পুত্র
সন্তান ছিল। পরিবার বলতে এই পুত্র সন্তানই তার সব কিছু। তাই সে তার ছেলেকে অনেক
আদর যত্ন করত। বৃদ্ধটির সমস্ত আশা আকাংক্ষা এবং স্বপ্ন ছিল তার ছেলেকে নিয়ে।
দুনিয়া ও আখিরাতের কথা চিন্তা করে একদন বৃদ্ধ ভাবলেন, তার ছেলেকে তিনি কোন আলেমের
কাছে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এজন্য তিনি তার সমস্ত জমানো পুঁজি ছেলের ইল্ম
শিক্ষার পিছনে খরচ করার মনস্থ করলেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সেই যুগের একজন
ভালো আলেমের খোঁজ পেয়ে। তিনি তার ছেলেকে পাঠালেন সেই আলেমের কাছে। ছেলেটি কয়েক বছরের
জন্য সেই আলেমের মক্তবে চলে গেলেন দ্বীন শিক্ষার জন্য।
শুরু হল অপেক্ষার পালা। অবশেষে দেখতে দেখতে ছেলেটির বাড়ি ফেরার দিন ঘনিয়ে এল। যেদিন
ছেলেটি বাড়ি ফিরবে, তার বাবা সকাল থেকে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। কখন তার কলিজার
টুকরা আসবে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল। দূরে এক ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। বৃদ্ধ
পিতা তার দুর্বল দৃষ্টি সত্ত্বেও বুঝে গেছে, এই সেই কলিজার টুকরো। বৃদ্ধের চোখে
মুখে হজিলিক খেলে গেল।
পুত্র কাছে আসতেই সে বুকে কড়িয়ে ধরলো। কতদিন বিরহের পর পিতা পুত্রের এই মিলন।
এ যেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আর হযরত ইসমাইল (আঃ) এর সেই মিলন মুহুর্তের প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু হঠাৎ পিতা তার পুত্রের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছূটা হতাশ হলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি কী ইল্ম শিখে এসেছ বাবা?” ছেলে উত্তর দিল, “ ওস্তাদের কাছে যে ভান্ডার ছিল
তার প্রায় সবই হাসিল করেছি, বাবা!” “কিন্তু তুমিতো সেই ইল্ম শিখনি যেই ইল্ম কেউ
শেখাতে পারে না, নিজে একা শিখে নিতে হয়।”, বৃদ্ধ বাবা বলে উঠল। এরপর বাবা বললেন, “হে
আমার কলইজার টুকরো পুত্র! যাও সেই ইল্ম শিখে তারপর আসো। আমি অপক্ষায় থাকবো।”
যুবক আবার তার ওস্তাদের কাছে ফিরে গেল এবং
সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। সেই সাথে অনুরোধ করল সেই ইল্ম শেখাতে যা একা নিজে শিখে
নিতে হয়। ওস্তাদ তাকে আদেশ করল, “বাজার থেকে চারশত মেষ কিনে নাও এবং দূর মরুভূমির
উপত্যকায় বসবাস শুরু কর। মেষপাল যখন চারশ থেকে হাজার হবে, তখন আমার কাছে ফিরে এস।”
যুবকটি কথা মতো মেষপাল নিয়ে দূর গহীন মরু উপত্যকায় পাড়ি জমালো। সে এখন মেষপাল।
সে একা, একা আর একা। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। কথা বলার কোন সঙ্গী নেই। ভেড়াগুলো যার
যার মতো চড়ে বাড়ায়। অবশেষে একদিন অস্থির হয়ে যুবকটি ভেড়াগুলোর সাথে কথা বলা শুরু
করল। কিন্তু ভেড়াগুলো তো আসলে যুবকের কোন কথাই বোঝেনা। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকয়ে থাকে
আর হাঁক ডাক ছাড়ে। এভাবে যতই দিন অতিবাহিত হয়, যুবকের অন্তরাত্না আরো শক্তিশালী
এবং পরিশুদ্ধ হতে থাকে। তার দুনিয়ার প্রতি মোহ, তার অহঙ্কার, তার গর্ব সব কিছুই
বিলীন হয়ে যায়। তার জ্ঞান, গরীমা, ধৈর্য্য বাড়তে থাকে। এভাবে সে একজন উত্তম
আখলাকের মানুষে পরিণত হয় । এই দিন গুলো
তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
দুই বছর পর মেষপালে ভেড়ার সংখ্যা একহাজারে উন্নীত হয়। যুবক তার ওস্তাদের কথামতো
ফিরে আসে এবং ওস্তাদের সাথে দেখা করে। ওস্তাদ বলেন, “তুমি এখন সেই ইল্ম হাসিল
করেছ যা একা একা নিজে শিখে নিতে হয়।”
নোটঃ মহান আল্লাহপাক যতো নবী পাঠিয়েছেন তাঁর মাঝে
প্রায় সবাই মেষপালক ছিলেন, মেষ চরিয়েছেন। বিশেষ করে নব্যুয়াতের আগে তাঁরা এই কাজ
করেছেন।
No comments: