মৃত্যুর পরপরই যা ঘটবে !

1:45:00 PM



















বারা ইবনু আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায় বের হলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রাসূলুল্লাহ  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন, আমরা তাঁর চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে
তাঁর হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেন: “তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও", (দুইবার অথবা তিনবার বললেন)”
অতঃপর বললেন: “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তখন তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য তাদের সাথে জান্নাতের কাফন জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায় অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেন: "হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত সন্তুষ্টির প্রতি বের হও
তিনি বললেন: “ফলে রুহ বের হয় তেমনিভাবে যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়
তিনি বললেন: “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, পবিত্র রুহ কে? তারা বলে: 'অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে তাকে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হতো, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তখন তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেন:
"আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পূনরায় উঠাব
তিনি বলেন: “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দুজন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে: "আল্লাহ" অতঃপর তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: "আমার দ্বীন ইসলাম" অতঃপর বলবে: ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে: তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" অতঃপর তারা বলবে: কিভাবে জানলে? সে বলবে: "আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি তা সত্য জ্ঞান করেছি"
অতঃপর, আসমান থেকে ঘোষণা আসবে: "আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও"
তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবে: 'সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তারএটাই তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত" সে তাকে বলবে: "তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে, শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে?" সে বলবে: "আমি তোমার নেক আমল" সে বলবে: "হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি!"
রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকেমুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন তার মাথার কাছে বসেন অতঃপর বলেন:
"হে অপবিত্র আত্মাআল্লাহর গোস্বা গজবের জন্য বের হও"! ফলে তিনি তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর তাকে টেনে বের করে আনেন যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) শলাকা বের করা হয়[1],

অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয় অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকে সহ তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, " খারাপ রুহ কে? তারা বলে: "অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়!
তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য কোন দরজা খোলা হয় না অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন:
﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠] 
তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে নাএবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ নাউট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে‎[2]
অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেন:
" তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয় অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:

﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ [الحج : ٣١] 
আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেনআকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ ‎‎মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোনজায়গায় নিক্ষেপ করল[3]
তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার নিকট দুজন ফেরেশতা আসে তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে: তোমার রব কে? সে বলে: হায় হায় আমি জানি না অতঃপর তারা বলে: তোমার দ্বীন কি? সে বলে: হায় হায় আমি জানি না অতঃপর তারা বলে: ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে: " আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবে: তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত সে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার মন্দ আমল!" সে বলবে, "হে আমার রব কিয়ামত কায়েম কর না
                                               [আহমদ আবূ দাউদ] হাদিসটি সহিহ

No comments:

Powered by Blogger.