আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে উপরে আছেন, সে ব্যাপারে সালাফদের মাযহাব কি? যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ছয়টি দিক থেকে মুক্ত এবং যে ব্যক্তি বলে যে, তিনি প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে আছেন, তার হুকুম কি?
সালফদের
মাযহাব এই যে, আল্লাহ
স্বীয় সত্বায় মাখলুকাতের উপরে
আছেন। আল্লাহ
তাআ’লা বলেন,
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“তোমরা
যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ
করে থাক, তাহলে বিতর্কিত
বিষয়টি আল্লাহ এবং রাসূলের
দিকে ফিরিয়ে দাও।
যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি
এবং পরকালের প্রতি ঈমান এনে
থাক। আর
এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক
দিয়ে উত্তম।” (সূরা
নিসাঃ ৫৯) আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ
“তোমরা
যে বিষয়ে মতবিরোধ কর,
তার ফায়সালা আল্লাহর নিকটে।” (সূরা
শুরাঃ ১০) আল্লাহ আরো
বলেনঃ
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقِيهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْفَائِزُونَ
“মুমিনদের
বক্তব্য কেবল এ কথাই
যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা
করার জন্য আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান
করা হয়, তখন তারা
বলেঃ আমরা শুনলাম ও
আদেশ মান্য করলাম।
মূলতঃ তারাই সফলকাম।
এবং যারা আল্লাহ ও
রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয়
করে এবং তাঁর শাস্তি
থেকে বেঁচে থাকে, তারাই
কৃতকার্য।” (সূরা
নূরঃ ৫১-৫২) আল্লাহ
আরো বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
“আল্লাহ
এবং তাঁর রাসূল কোন
কাজের আদেশ করলে কোন
ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার
নারীর সে বিষয়ে দ্বিমত
পোষণ করার অধিকার নেই। আর
যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলের বিরোধীতা করবে, সে সুস্পষ্ট
গোমরাহীতে পতিত হবে।”
(সূরা আহযাবঃ ৩৬) আল্লাহ
তাআ’লা আরো বলেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“অতএব
তোমার পালকর্তার কসম, তারা ঈমানদার
হবে না, যতক্ষণ না
তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের
ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে
মেনে নেয়। অতঃপর
আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন
রকম সংকীর্ণতা বোধ না করে
এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে
কবূল করে নেবে।”
(সূরা নিসাঃ ৬৫) সুতরাং
জানা গেল যে, মতভেদের
সময় ঈমানদারের পথ হল আল্লাহর
কিতাব ও তাঁর রাসূলের
সুন্নাহর দিকে ফেরত যাওয়া
এবং তাদের কথা শ্রবণ
করা ও আনুগত্য করা। সাথে
সাথে আল্লাহ এবং রাসূলের
কথার বাইরে অন্য কারও
কথা গ্রহণ করার ব্যাপারে
নিজের কাছে কোনরূপ স্বাধীনতা
না রাখা। এ
ছাড়া কেউ ঈমানদার হতে
পারবে না। পরিপূর্ণরূপে
নিজেকে কুরআন ও সুন্নাহর
কাছে সোপর্দ করতে হবে
এবং অন্তর থেকে সংকীর্ণতা
অবশ্যই দূর হতে হবে। এর
বিপরীত করলে আল্লাহর আযাবের
সম্মুখীন হতে হবে।
আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ يُشَاقِقْ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“হেদায়েতের
পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে
কেউ রাসূলের বিরোধীতা করবে এবং ঈমানদারদের
অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলবে,
আমি তাকে ঐ দিকেই
ফেরাব যে দিক সে
অবলম্বন করেছে এবং তাকে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর
তা কতই না নিকৃষ্ট
গন্তব্যস্থান।” (সূরা
নিসাঃ ১১৫)
আল্লাহ
তাআ’লা স্বীয় সত্বায়
মাখলুকের উপরে থাকার মাসআলাটি
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের
সুন্নাহর দিকে ফেরানোর পর
তা নিয়ে গবেষণাকারী অবশ্যই
জানতে পারবে যে, আল্লাহ
তাআ’লা স্বসত্বায় সমস্ত
মাখলুকাতের উপরে আছেন।
বিভিন্ন বাক্যের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নায়
এই বিষয়টি অতি সুন্দর
ও সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা
হয়েছে।
১)
সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে
যে, আল্লাহ আকাশের উপরে
আছেন। আল্লাহ
বলেন,
أَمْ أَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
“তোমরা
কি নিরাপদ হয়ে গেছ
যে, যিনি আকাশে আছেন
তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন
না, অতঃপর তোমরা জানতে
পারবে কেমন ছিল আমার
সতর্কবাণী।” (সূরা
মুলকঃ ১৭)
নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করার
হাদীছে বলেনঃ
رَبُّنَا اللَّهُ الَّذِي فِي السَّمَاءِ
“আমাদের
প্রতিপালক আল্লাহ। যিনি
আকাশে আছেন।” তিনি
আরো বলেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهَا فَتَأْبَى عَلَيْهِ إِلَّا كَانَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ سَاخِطًا عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنْهَا
“ঐ
সত্বার কসম, যার হাতে
আমার প্রাণ রয়েছে, কোন
পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায়
আসার জন্য ডাক দিলে
স্ত্রী যদি বিছানায় যেতে
অস্বীকার করে তাহলে যিনি
আকাশে আছেন, স্বামী সন্তুষ্ট
হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি
অসন্তুষ্ট থাকেন।”
২)
আল্লাহ উপরে আছেন, এ
কথা উল্লেখ করে আল্লাহ
বলেনঃ
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
“তিনিই
মহা প্রতাপশালী স্বীয় বান্দাদের উপরে
আছেন।” (সূরা
আনআ’মঃ ১৮) আল্লাহ
আরো বলেনঃ
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ
“তারা
তাদের প্রতিপালককে ভয় করে চলে। যিনি
তাদের উপরে আছেন।”
(সূরা নাহলঃ ৫০) নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এর বাণী,
لَمَّا قَضَى اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابِهِ فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِي غَلَبَتْ غَضَبِي
“আল্লাহ
তাআ’লা যখন সৃষ্টি
সমাপ্ত করলেন, তখন তিনি
একটি কিতাবে লিখে রাখলেন,
নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার
ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে। কিতাবটি
তাঁর নিকটে আরশের উপরে
রয়েছে।”
৩)
আল্লাহর দিকে বিভিন্ন বিষয়
উঠা এবং তাঁর কাছ
থেকে বিভিন্ন জিনিষ অবতীর্ণ হওয়ার
কথা উল্লেখিত হয়েছে। উপরের
দিকে উঠা সব সময়
নীচের দিক থেকেই হয়ে
থাকে। এমনিভাবে
অবতরণ করা সাধারণত উপরের
দিক থেকে নীচের দিকেই
হয়ে থাকে। আল্লাহ
তাআ’লা বলেনঃ
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
“তাঁরই
দিকে পবিত্র বাক্যসমূহ উঠে
থাকে এবং সৎ আমল
তাকে উপরের দিকে তুলে
নেয়।” (সূরা
ফাতিরঃ ১০) আল্লাহ বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ
“ফেরেশতাগণ
এবং রূহ আল্লাহ তাআ’লার দিকে উর্ধ্বগামী
হয়।” (সূরা
মা’আরিজঃ ৪) আল্লাহ
বলেনঃ
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ
“তিনি
আকাশে থেকেই জমিনে সকল
কর্ম পরিচালনা করেন।” (সূরা
সেজদাঃ ৫) আল্লাহর বাণী,
لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
“এতে
মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের
দিক থেকেও নেই এবং
পেছন দিক থেকেও নেই। এটা
প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।” (সূরা
ফুচ্ছিলাতঃ ৪২) আল্লাহ বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِنْ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلَامَ اللَّهِ
“আর
মুশরেকদের কেউ যদি তোমার
কাছে আশ্রয় চায়, তবে
তাকে আশ্রয় দেবে যাতে
সে যাতে আল্লাহর কালাম
শুনতে পায়।” (সূরা
তাওবাঃ ৬) কুরআন) যেহেতু
আল্লাহর কালাম এবং তা
আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ
হয়েছে তাই এর দ্বারা
আমরা জানতে পারলাম যে,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় সত্বায়
উপরে রয়েছেন। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেনঃ
يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ
“আমাদের
প্রতিপালক আল্লাহ তাআ’লা
প্রতিদিন রাত্রের একতৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে
নেমে আসেন এবং বলতে
থাকেন কে আছে আমার
কাছে দু’আ করবে?
আমি তার দু’আ
কবূল করব। কে
আছে আমার কাছে চাইবে?
আমি তাকে প্রদান করবো। কে
আছে আমার কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করবে? আমি তাকে
ক্ষমা করার জন্য প্রস্তত
আছি।” বারা
বিন আযিব (রাঃ) এর
হাদীছে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে
বিছানায় শয়নকালে পাঠ করার দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন। সেই
দু’আর মধ্যে এটাও
আছে,
آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ فَإِنْ مُتَّ مُتَّ عَلَى الْفِطْرَةِ
“আমি
আপনার অবতারিত কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন
করেছি। এবং
আপনার প্রেরিত নবীর উপর বিশ্বাস
স্থাপন করেছি। এই
দু’আ পাঠ করার
পর যদি তুমি মৃত্যু
বরণ কর, তাহলে তুমি
ফিতরাতের (ইসলামের) উপর মৃত্যু বরণ
করবে।”
৪)
আল্লাহ তাআ’লা উপরে
হওয়ার গুণে নিজেকে গুণাম্বিত
করা। আল্লাহ
তাআ’লা বলেনঃ
سَبِّحْ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
“আপনি
আপনার সর্বোচ্চ ও সর্বমহান পালনকর্তার
নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।”
(সূরা আল-আলাঃ ১)
আল্লাহ বলেনঃ
وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
“সেগুলোকে
(ভূমন্ডল ও নভমন্ডলকে) সংরক্ষণ
করা তাঁকে পরিশ্রান্ত করেনা। তিনিই
সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।” (সূরা
বাকারাঃ ২৫৫) নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
বাণী,
سبحان ربي الأعلى
“আমি
পবিত্রতা বর্ণনা করছি আমার
সুমহান প্রভুর।”
৪)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আরাফার মাঠে ভাষণ দেয়ার
সময় আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে আকাশের দিকে
ইঙ্গিত করেছেন। তিনি
উপস্থিত সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন,
((ألا هل
بلغت؟ আমি কি তোমাদের
কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিয়েছি?
উপস্থিত জনতা এক বাক্যে
স্বীকার করল, হ্যাঁ আপনি
আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তখন
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেন, (أللهم اشهد) হে আল্লাহ! আপনি স্বাক্ষী থাকুন। এ
কথা বলতে বলতে তিনি
উপরের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে
ইশারা করতে লাগলেন এবং
মানুষের দিকে তা নামাতে
লাগলেন। এ
হাদীছটি মুসলিম শরীফে যাবের
(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ
হাদীছটিতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ
আকাশে। তা
নাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এর উপরের দিকে
হাত উঠিয়ে ইশারা করা
অনর্থক বলে সাব্যস্ত হবে।
৬)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছেন,
আল্লাহ কোথায়? দাসী বলল,
আকাশে। এ
কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
أَعْتِقْهَا فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ
“তাকে
মুক্ত করে দাও।
কেননা সে ঈমানদার।”
হাদীছটি মুসলিম শরীফে বর্ণিত
মুআবীয়া বিন হাকাম আস্
সুলামী (রাঃ) এর দীর্ঘ
হাদীছের অংশ বিশেষ।
এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
স্বীয় সত্বায় উপরে হওয়ার
ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল। কেননা
(أين)
শব্দটি দিয়ে কোন বস্তর
অবস্থান সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
যখন মহিলাটিকে আল্লাহ কোথায়- এ
কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন মহিলাটি
বললঃ তিনি আকাশে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
তার এ কথাকে মেনে
নিলেন এবং বললেনঃ এটাই
ঈমানের পরিচয়। তাকে
মুক্ত করে দাও।
কারণ সে ঈমানদার।
সুতরাং যতক্ষণ কোন মানুষ
আল্লাহ উপরে হওয়ার বিশ্বাস
না করবে এবং এ
কথার ঘোষণা না দিবে
ততক্ষণ সে ঈমানদার হতে
পারবে না।
আল্লাহ
তাআ’লা স্বীয় সত্বায়
মাখলুকের উপরে হওয়ার ব্যাপারে
কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে
উপরোক্ত দলীলগুলো উল্লেখ করা হল। এ
ব্যাপারে আরো দলীল রয়েছে। যা
এখানে উল্লেখ করা সম্ভব
নয়। এ
সমস্ত দলীলের উপর বিশ্বাস
স্থাপন করে সালাফে সালেহীন
এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে,
আল্লাহ স্বীয় সত্বায় মাখলুকের
উপরে রয়েছেন। এমনিভাবে
তারা আল্লাহর গুণাবলী সুউচ্চ হওয়ার উপরও
একমত হয়েছেন।
وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“আকাশ
ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যদা
তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী,
প্রজ্ঞাময়।” (সূরা
রুমঃ ২৭)
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আল্লাহর
রয়েছে উত্তম নামসমূহ।
কাজেই সেই নামসমূহ ধরেই
(অসীলায়) তাঁকে ডাক।”
(সূরা আ’রাফঃ ১৮০)
فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“তোমরা
আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
করো না। নিশ্চয়ই
আল্লাহ অবগত আছেন আর
তোমরা অবগত নও।”
(সূরা নাহলঃ ৭৪)
فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ
“তোমরা
জেনে বুঝে আল্লাহর জন্য
অংশীদার সাব্যস্ত করোনা।” (সূরা
বাকারাঃ ২২) এমনিভাবে আরো
অনেক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর
সত্বা, গুণাগুণ এবং কর্মসমূহ পরিপূর্ণ
এবং সর্বোচ্চ হওয়ার কথা প্রমাণিত
হয়।
অনুরূপভাবে
কুরআন, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী সালাফে
সালেহীনের সর্ব সম্মত ঐকমত্য,
সুস্থ বিবেক এবং ফিতরাতও
আল্লাহ উপরে হওয়ার কথা
স্বীকার করে নেয়।
বিবেক
এ কথা স্বীকার করে
নেয় যে, উচ্চে হওয়া
একটি পরিপূর্ণ ও উত্তম গুণ। অপর
পক্ষে উপরে হওয়ার বিপরীতে
রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গুণ। আল্লাহর
জন্য সকল পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট
সাব্যস্ত। তাই
আল্লাহর জন্য সুউচ্চে হওয়া
বিবেক সম্মত। তাই
উপরে হওয়াতে ত্রুটিপূর্ণ কোন
গুণ সাব্যস্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা
বলব যে, উপরে হওয়া
সৃষ্টিজীব দ্বারা বেষ্টিত হওয়াকে
আবশ্যক করে না।
আর যে ব্যক্তি এরূপ
ধারণা করবে, সে নিছক
ধারণা করল এবং বিবেকভ্রষ্ট
হিসাবে পরিগণিত হল।
মানুষের
স্বভাব জাত ধর্মের মাধ্যমে
আল্লাহ মাখলুকের উপরে প্রমাণিত হয়। মানুষ
যখন আল্লাহর কাছে দু’আ
করে, তখন অন্তরকে আকাশের
দিকে ধাবিত করে।
এই জন্যই মানুষ যখন
আল্লাহর কাছে দু’আ
করে তখন ফিতরাতের দাবী
অনুযায়ী আকাশের দিকে হাত
উত্তোলন করে। একদা
হামদানী নামক জনৈক ব্যক্তি
ইমাম আবুল মা‘আলী
আল-জুওয়াইনীকে বলল, আপনি তো
আল্লাহ উপরে হওয়াকে অস্বীকার
করেন। আপনি
আমাকে বলুন, আল্লাহ যদি
উপরে না থাকেন, তা
হলে আল্লাহ ভক্ত কোন
মানুষ যখনই আল্লাহর কাছে
দু’আ করে, তখন
তার অন্তরকে উপরের দিকে ফেরানোর
প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কেন?
এ কথা শুনে জুওয়াইনী
মাথায় হাত মারতে মারতে
বলতে থাকল হামদানী আমাকে
দিশেহারা করে দিয়েছে! আমাকে
হামদানী দিশেহারা করে দিয়েছে!
ঘটনাটি
এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।
ঘটনার সূত্র সঠিক হোক
কিংবা ভুল হোক, তাতে
কিছু আসে যায়না।
প্রতিটি ব্যক্তির অনুভূতিও হামদানীর মতই। দু’আ করার সময়
সবাই উপরের দিকে অন্তর
ও হাত উঠানোর প্রয়োজনীয়তা
অনুভব করে থাকে।
এ কথা কেউ অস্বীকার
করতে পারবে না।
সহীহ
মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা
(রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এমন এক ব্যক্তির কথা
উল্লেখ করেন, যে দীর্ঘ
সফর করে এলোমেলো কেশ
ও ধুলামলিন পোষাক নিয়ে অন্তত্য
ব্যকুলভাবে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ডাকতে
থাকে হে আমার প্রতিপালক!
হে রব!! অথচ সে
ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোষাক
পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত,
এমতাবস্থায় কি করে তার
দু’আ কবূল হতে
পারে ? এমনিভাবে নামাযে বান্দা তার
অন্তরকে আকাশের দিকে ফেরায়। বিশেষ
করে সে যখন সেজদায়
যায় তখন বলে,سبحان ربي الأعلى অর্থঃ
আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি আমার
সুউচ্চ প্রভুর। যেহেতু
সে জানে যে তার
মা’বূদ আকাশে তাই
সে এভাবে বলে থাকে।
যারা
আল্লাহ আরশের উপরে হওয়াকে
অস্বীকার করে তারা বলে
থাকে, আল্লাহ তাআ’লা
ছয়টি দিক থেকে মুক্ত
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা
কোন নির্দিষ্ট দিকে অবস্থান করেন
না; বরং তিনি সর্বদিকে
সর্বত্র সদা বিরাজিত।
আমরা বলব এ কথাটি
একটি বাতিল কথা।
কেননা এটা এমন কথা
যা আল্লাহ নিজের জন্য
সাব্যস্তকৃত বিষয়কে অস্বীকার করার
নামান্তর। আর
সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
আল্লাহর জন্য যে সমস্ত
গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন, তাও বাতিল করার
আহবান জানায়। তা
এই যে, মহান আল্লাহ
তাআ’লা উপরের দিকে
রয়েছেন। আল্লাহ
উপরে আছেন এ কথা
অস্বীকার করা হলে আল্লাহকে
অস্তিত্বহীন বস্তর সাথে তুলনা
করা হয়ে যায়।
কেননা দিক হল ছয়টি। উপর,
নীচ, ডান, বাম, পশ্চাৎ
এবং সম্মুখ। অস্তিত্ব
সম্পন্ন যে কোন বস্তকে
এই ছয়টি জিনিষের সাথে
সম্পর্কিত রাখতে হবে।
এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বিবেক
সম্মত ও গ্রহণযোগ্য।
আল্লাহ তাআ’লার ক্ষেত্রে
যদি ছয়টি দিককে সমানভাবে
অস্বীকার করা হয়, তা
হলে আল্লাহ নাই এ
কথাই আবশ্যক হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ)
কোন মানুষের সুস্থ মস্তিষ্ক এই
ছয়টি দিকের বাইরে কোন
জিনিষের অস্তিত্বকে সম্ভব মনে করতে
পারে কি? কেননা বাস্তবে
আমরা এ ধরণের কোন
জিনিষের অস্তিত্ব খোঁজে পাইনি।
আমরা দেখতে পাই যে,
প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তি
বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ
উপরে। আল্লাহর
কিতাব, রাসূলের সুন্নাত, সালাফে সালেহীনের ইজমা,
সুস্থ বিবেক এবং ফিতরাতও
তা সমর্থন করে।
যেমন আমরা ইতোপূর্বে বর্ণনা
করেছি। আমরা
এও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ
তাআ’লা সকল বস্তকে
বেষ্টন করে আছেন, কিন্তু
আল্লাহকে কোন বস্তই পরিবেষ্টন
করতে পারে না।
কোন মু’মিনের জন্যই
এটা বৈধ নয় যে,
সে মানুষের কথাকে গ্রহণ করতে
গিয়ে কুরআন সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান
করবে। সে
মানুষটি যত বড়ই হোক
না কেন। আমরা
ইতি পূর্বে দলীলগুলো বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করেছি।
যারা
বলে আল্লাহ মু’মিন
ব্যক্তির অন্তরে আছেন, তাদের
কথার পক্ষে আমাদের জানামতে
কুরআন, সুন্নাহ কিংবা সালাফে সালেহীনের
কোন উক্তি পাওয়া যায়
না। কথাটির
অর্থ যদি এই হয়
যে, আল্লাহ বান্দার অন্তরে
অবতীর্ণ হয়ে আছেন, তাহলে
কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোওয়াট
। আল্লাহ তাআ’লা এ থেকে
অনেক পবিত্র। বড়
আশ্চর্যের কথা এই যে,
কিভাবে একজন মানুষ কুরআন্তসুন্নাহর
ভাষ্য মতে আল্লাহ তাআ’লা আকাশে হওয়াকে
প্রত্যাখ্যান করে এবং আল্লাহ
তাআ’লা মু’মিনের
অন্তরে থাকেন একথা মেনে
নিতে পারে?! অথচ এর
পক্ষে কুরআন সুন্নাহর একটি
দলীলও মিলে না।
আল্লাহ
মু’মিন বান্দার অন্তরে
আছেন এ কথার অর্থ
যদি এই হয় যে,
মু’মিন ব্যক্তি সদা-সর্বদা অন্তরে আল্লাহকে
স্মরণ করে, তাহলে এ
কথা সত্য। তবে
বাক্যটি পরিবর্তন করা দরকার, যাতে
বাতিল অর্থের সম্ভাবনা দূর
হয়ে যায়। এভাবে
বলা উচিৎ যে, মু’মিন বান্দার অন্তরে
সবসময় আল্লাহর যিক্র বিদ্যমান
রয়েছে। তবে
যারা এ কথা বলে
তাদের কথা থেকে পরিস্কার
বুঝা যায় যে, তাদের
উদ্দেশ্য হল আল্লাহ আকাশে
আছেন একথাকে অস্বীকার করা
এবং মু’মিনের অন্তরে
আল্লাহর অবস্থানকে সাব্যস্ত করা। অথচ
এটা বাতিল।
সুতরাং
আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত
এবং সালাফে সালেহীনের ইজমা
বাদ দিয়ে এমন বাক্য
ব্যবহার থেকে সাবধান থাকা
উচিৎ, যা সত্য-মিথ্যা
উভয়েরই সম্ভাবনা রাখে। মুমিনদের
উচিৎ প্রথম যুগের আনসার-মুহাজির সাহাবীদের পথ অনুসরণ করা। তবেই
তারা আল্লাহর সন'ষ্টি অর্জনে
সক্ষম হবেন। আল্লাহ
বলেন,
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
“আর
যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে
অগ্রগামী এবং যারা তাদের
অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের
প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও
তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর
তাদের জন্য প্রস্তত রেখেছেন
এমন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে
নদীসমূহ প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে
তারা থাকবে চিরকাল।
এটাই হল মহান সফলতা।” (সূরা
তাওবাঃ ১০০)
আল্লাহ
আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে তাদের
অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহ
আমাদের সকলকে তাঁর রহমত
দান করুন। তিনিই
মহান দাতা।
আল্লাহ তাআ’লা সুউচ্চ আরশের উপরে আছেন
No comments: